Published : 06 Sep 2025, 11:08 AM
সুন্দরবন লাগোয়া কয়রার ৪ নম্বর গ্রামে এক বনজীবী পরিবারে আমার জন্ম। এখন বয়স প্রায় ৬০। ছোটবেলা থেকেই বাপ-চাচাদের সঙ্গে বনে যেতাম, দেখতাম কেমন করে তাঁরা মাছ ধরেন। ধীরে ধীরে আমিও নেমে পড়লাম বনের কাজে। মাছ ধরা হয়ে উঠল আমার পেশা, আমার জীবন। ঘরবাড়ি, নৌকা, জাল—সবই অল্প অল্প করে মাছ বেচা টাকায় বানিয়েছি। তিন মাস সুন্দরবন বন্ধ থাকায় ঢুকতে পারিনি। সংসার চালাতে ঋণও নিতে হয়েছে। নৌকা আর জাল সব ঠিকঠাক করতে দুই দিন দেরি হয়েছে। তিন মাস পরে যাচ্ছি সুন্দরবনে, আল্লাহ্ চাইলে সাত-আট দিন পর ফিরব। সুন্দরবনে আমাদের জীবন বড় অনিশ্চিত। কখনো মনে হয়, এবার আর বাড়ি ফিরব না। বনের মধ্যে কতবার যে বাঘের মুখোমুখি হয়েছি, হিসাব নেই। রাতে ছোট খালের মধ্যে নৌকায় শুয়ে শুয়ে শুনেছি বাঘের বুক কাঁপানো হুংকার। নদীর, খালের চরে কুমিরও দেখেছি।
সব ভয়, সব বিপদ মেনে নিয়েই বনের পেশায় আছি। আমার চাচাকে একবার বাঘ ধরেছিল। সেবার চাচার সাথে বারিক সরদারের নৌকায় বাড়ি ফিরছিলাম। নদীতে উজান থাকায় সুন্দরবনের কুকুমারী খালে নৌকা ভিড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম। রান্নার কাঠ আনতে নেমে গেল চাচা আর ছোট চাচাতো ভাই মিজান। ওই এলাকায় অনেক হরিণের পায়ের ছাপ ছিল। বনের ভেতর থেকে হঠাৎ মিজানের কান্নার আওয়াজ। বুকের মধ্যে ধক করে উঠল। দেরি না করে বইঠা হাতে বনে ছুটলাম। কিছু দূর গিয়েই দেখি বড় একটা বাঘের বুকের নিচে চাচার নিথর দেহ পড়ে আছে। বাঘ আমাকে দেখেই গোঙানির মতো শব্দ করে উঠল, মুখ থেকে লালা ঝরছে দরদর করে। হাতের বইঠা দিয়ে গাছের গায়ে বাড়ি দিয়ে শব্দ করি, বাঘ এক পা দিয়ে মাটি আঁচড়াতে থাকে, চোখে আগুন। কী আর করব! লাফ দিয়ে নৌকায় ফিরে আসি। পরে আশপাশের জেলেদের ডেকে সবাই মিলে গিয়ে দেখি বাঘ তখনো আছে, চাচার দেহের অর্ধেকটা খেয়ে ফেলেছে। সবাই মিলে বাঘ তাড়িয়ে বাকি অংশ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
দিনটার কথা মনে পড়লে আজও শরীর ঘেমে যায়, বুক কাঁপে। সুন্দরবনে মাছ ধরতে যাওয়ারও অনেক প্রস্তুতি। বাড়ি থেকে রওনা দেওয়ার আগে নৌকায় চাল, ডাল, তরিতরকারি, খাওয়ার পানি সব নিয়ে নিই। এরপর নৌকাতেই কাটে সাত-আট দিন। রান্না, খাওয়াদাওয়া, ঘুম—নৌকাতেই সব। পাটাতনের নিচে রাখা মাটির চুলায় রান্না করি, সঙ্গে থাকে মাছ ধরার জাল আর মাছ রাখার পাত্র। জালে ওঠে চিংড়ি, ভেটকি, দাতিনা। তবে সব সময় মাছ সমান হয় না, কখনো বেশি, কখনো কম। মাছ ভালো রাখতে বরফও নিতে হয়; কারণ, অন্তত আট দিন পর ঘরে ফেরার কথা। সুন্দরবনে মাছ ধরার সময় দিনের হিসাব আমরা রাখি না। ‘গোন’ (অমাবস্যা বা পূর্ণিমার সময় জোয়ার–ভাটার প্রভাব) ধরে চলে আমাদের হিসাব। আবার কত মানুষ বাঘ বা কুমিরের কামড়ে মারা যায়! মোবাইলের নেটওয়ার্কও থাকে না, আল্লাহর ওপর ভরসা করে ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকে পরিবারের লোকজন। আরও পড়ুন পিত্তথলিতে পাথর বা গলব্লাডার স্টোন কেন হয়, কারা বেশি ঝুঁকিতে ২৫ আগস্ট ২০২৫।
কাতারে হামলার পর ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করছে কানাডা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী