Published : 01 Sep 2025, 09:06 AM
ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) বর্তমান চিত্র স্পষ্টতই দেখাচ্ছে, এই কেন্দ্রটি যে নিবিড় পরিচর্যার নামে চলছে, তা আসলে ‘সংকটাপন্ন রোগীদের নিবিড় অপেক্ষারoom’। এখানে জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তে থাকা মানুষদের উন্নত চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে কী ঘটছে তা ভিন্ন। হাসপাতালের খাতায় ২০ শয্যার দুটি আইসিইউ ইউনিটের কথা উল্লেখ থাকলেও, দীর্ঘদিন ধরে একটি ইউনিট তালাবদ্ধ রয়েছে। বাকি যে ১০টি শয্যা চালু আছে, সেখানেও ভেন্টিলেশন সুবিধা নেই, জীবন রক্ষাকারী জরুরি যন্ত্রপাতিও নেই। প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, পর্যাপ্ত নার্স, আয়া বা নিরাপত্তাকর্মী—কোনো কিছুই সেখানে নেই। যা আছে, তা হলো অদক্ষতা ও অবহেলা। এই অব্যবস্থাপনার কারণে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা বা চট্টগ্রামে পাঠানো হচ্ছে। আর যারা আর্থিকভাবে সক্ষম নয়, তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই থাকছে না।
পরিস্থিতি এমন যে আইসিইউতে রোগীর স্বজনরা মেঝেতে চাদর বিছিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে, খাবার খাচ্ছে এবং রোগীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে অবস্থান করছে। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।ফেনীর এই চিত্র শুধু স্থানীয় কোনো সমস্যা নয়, এটি আমাদের সমগ্র সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গভীর সমস্যা এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার একটি স্পষ্ট প্রমাণ। শুধু নতুন ভবন তৈরি করে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করে বা ছবি তুলে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যায় না। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক সংখ্যক জনবল, প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স ও সহায়ক কর্মী, পর্যাপ্ত সরঞ্জাম এবং কঠোর প্রশাসনিক তদারকি।ফেনীর হাসপাতালের আইসিইউ সেবা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে চালু করার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বন্ধ থাকা আইসিইউ ইউনিটটি অবিলম্বে খুলে চালু করতে হবে। প্রতিটি ইউনিটে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স, আয়া, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নিরাপত্তাকর্মী থাকতে হবে।
প্রতিটি শয্যায় কার্যকর মনিটর, ভেন্টিলেশন সিস্টেম, পোর্টেবল এক্স-রে, আলট্রাসাউন্ড, ডায়ালাইসিস যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে হবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর প্রোটোকল তৈরি করতে হবে এবং স্বজনদের জন্য আলাদা অপেক্ষারoom এর ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি, স্বাস্থ্য খাতে প্রশাসনিক উদাসীনতার সংস্কৃতি ভেঙে বাস্তব জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। একটি সভ্য সমাজের প্রকৃত মূল্যায়ন শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে হয় না, বরং সমাজ তার অসুস্থ, দরিদ্র ও সংকটাপন্ন নাগরিকদের পাশে কতটা মানবিকভাবে দাঁড়াতে পারে, তার মাধ্যমেই নির্ধারিত হয়। ফেনীর এই হাসপাতাল আমাদের সামনে সেই বাস্তবতা তুলে ধরেছে।।