Published : 05 Sep 2025, 09:06 AM
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে মিরসরাই অংশে একের পর এক মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মিরসরাইয়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গত এক বছরে ৪৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়া ১৩৪ জন আহত হয়েছেন। ভারী যানবাহন, বিশেষ করে ট্রাক ও লরির কারণে এখানে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। ট্রাক-লরি দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়ে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা যথাযথ নয়। মিরসরাইয়ের ২৮ কিলোমিটার পথে গত এক বছরে ৮২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার ৬৫ শতাংশের বেশি ঘটেছে ভারী যানবাহনের কারণে। ট্রাক-লরির বেপরোয়া গতি, অবৈধ পার্কিং এবং যন্ত্রাংশের ত্রুটি মিলে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
এর সাথে যোগ হয়েছে অদক্ষ চালক, ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা এবং বেহাল সড়ক। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা প্রাণহানির দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এই মৃত্যুর মিছিল কি শুধু ভাগ্য? নাকি এর পেছনে রয়েছে আমাদের অব্যবস্থাপনা, উদাসীনতা এবং আইনের প্রয়োগে দুর্বলতা? হাইওয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য থেকে বেশ কিছু কারণ উঠে এসেছে। সড়কের গর্ত ও ত্রুটি, চালকের চোখে ঘুম, বেপরোয়া গতি এবং অটোরিকশার মতো ছোট যানের মহাসড়কে অবৈধ চলাচলের ফলে এখানে দুর্ঘটনা বাড়ছে। যদিও পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলা করছে, কিন্তু তা যথেষ্ট কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় হাজার হাজার মানুষ মারা যান। পরিসংখ্যানের খাতায় শুধু মৃত্যুর সংখ্যা লিপিবদ্ধ হয়। কিন্তু প্রতিটি মৃত্যুর পেছনে কত পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে যায়, তা আমাদের দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায়।
দুর্ঘটনার পর সংবাদমাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবার নিয়ে মানবিক প্রতিবেদন মানুষকে শোকাহত করে তোলে, কিন্তু অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তা স্মৃতি থেকে মুছে যায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হারিয়ে গেলে একটি পরিবার কীভাবে চলে, অথবা পরিবারের সবাইকে হারিয়ে কোনো শিশু কীভাবে বড় হয় – দুর্ঘটনার কিছুদিন পর এসব প্রশ্ন মানুষকে খুব বেশি ভাবায় না। সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধে সরকার ও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর পদক্ষেপে ঘাটতি খুবই হতাশাজনক। মহাসড়কটিতে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। শুধু মামলা নয়, কঠোর ট্রাফিক আইন প্রয়োগ, সড়কের নিয়মিত মেরামত এবং চালকদের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার। অবৈধ পার্কিং বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং অদক্ষ চালকদের লাইসেন্স বাতিল করাও জরুরি।।