Published : 04 Sep 2025, 01:08 PM
হাঁটুর ভেতরে একটি গুরুত্বপূর্ণ লিগামেন্ট হলো এসিএল বা অ্যানটেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট। এটি ঊরুর হাড় (ফিমার) ও পায়ের পাতার হাড়কে (টিবিয়া) যুক্ত করে শক্ত করে ধরে রাখে। হাঁটুর স্থিতিশীলতা, বিশেষ করে সামনে-পেছনে ও ঘুরে যাওয়ার সময় হাঁটুকে সঠিক অবস্থানে ধরে রাখে। কেন ইনজুরি হয় সাধারণত হাঁটুতে হঠাৎ চাপ, মোচড় লাগা বা আঘাতের কারণে এসিএল ইনজুরি হয়। ফুটবল, বাস্কেটবল, ক্রিকেট, হ্যান্ডবল, কাবাডি ইত্যাদি যাঁরা খেলেন, তাঁদের এসিএল জখম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিশেষ করে হঠাৎ দৌড়ানো, থেমে যাওয়া বা দিক পরিবর্তনের সময় এই ইনজুরি হয়ে থাকে। ব্যায়াম বা জিম করার সময় ও লাফিয়ে নামার সময় হাঁটু সঠিক ভঙ্গিতে না থাকাও একটি কারণ। গাড়ি দুর্ঘটনায় বা সিঁড়ি থেকে পড়ে হাঁটুর সামনে ধাক্কা লাগলে এমনও হতে পারে। নারীদের তুলনামূলকভাবে এই ইনজুরি বেশি হয়। কারণ, নারীদের হাঁটুর গঠন, হরমোনজনিত প্রভাব ও পেশি নিয়ন্ত্রণে পার্থক্য থাকে। কীভাবে বুঝবেন আঘাতের সময় ‘পপ’ শব্দ হতে পারে।
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হাঁটু ফুলে যেতে পারে। হাঁটুর স্থিতিশীলতা বা নড়াচড়ায় অস্বস্তি হতে পারে। হাঁটু শক্ত হয়ে যায়, ব্যথা করে। দৌড়ানো, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা বা বাঁক নেওয়ার সময় হাঁটু সরে যাওয়ার মতো অনুভূতি হতে পারে। পরীক্ষা ও চিকিৎসা লেকম্যান টেস্ট, অ্যানটেরিয়র ড্রয়ার টেস্ট, পিভট শিফট টেস্ট ইত্যাদি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করে দেখতে হয়। এসিএল ইনজুরি হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো এমআরআই। হাড় ভেঙেছে কিনা, তা দেখতে এক্স-রে করার প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসা রোগীর বয়স, কাজের ধরন ও ইনজুরির মাত্রার ওপর নির্ভর করে। সাধারণত যাঁরা খুব বেশি খেলাধুলা করেন না বা শারীরিকভাবে কম সক্রিয়, তাঁদের জন্য অস্ত্রোপচার ছাড়া চিকিৎসা কার্যকর। এছাড়া বিশ্রাম, বরফের সেঁক ও আক্রান্ত জায়গা উঁচুতে রাখলেও উপকার পাওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
কিছু ফিজিওথেরাপি বেশ কার্যকর। এর মধ্যে রয়েছে হাঁটুর পেশি (কোয়াড্রিসেপস ও হ্যামস্ট্রিং) শক্তিশালী করার ব্যায়াম, ব্যালান্স ও প্রোপ্রিওসেপশন ট্রেনিং এবং হাঁটুর জন্য ব্রেস বা সাপোর্ট ব্যবহার করা। যাঁরা নিয়মিত খেলাধুলা করেন, বয়স কম বা যাঁদের হাঁটু বারবার সরে যায়, তাঁদের জন্য অপারেশন বা অস্ত্রোপচার করাই ভালো। অপারেশনের পর দীর্ঘমেয়াদী ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন চিকিৎসা (৬ থেকে ৯ মাস) অত্যন্ত জরুরি। প্রতিরোধের উপায় নিয়মিত হাঁটুর পেশি শক্তিশালী করার ব্যায়াম করুন। ওয়ার্ম আপ বা স্ট্রেচিং ছাড়া খেলাধুলা করা উচিত না। লাফানো ও বাঁক নেওয়ার সময় সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখতে হবে। আপনার পায়ের জন্য উপযুক্ত জুতা ব্যবহার করুন। এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল।।